মিথ্যা বলা পরিহার করি : শিপার মাহমুদ জুম্মান
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, আমার প্রাণপ্রিয় ছোট ভাই। ওকে ঢাকা বনানী করাইল কলোনিতে অবস্থিত দারুল উলুম মুহাম্মদীয়া মাদরাসায় গতবছর তাইছির জামাতে ভর্তি করেছিলাম। আবদুল্লাহ ঢাকায় নতুন এসেছে, বয়সও খুব অল্প, এইভেবে প্রতি সপ্তাহে দু’একবার তাকে দেখার জন্য বনানী মাদ্রাসায় যেতে হয়। আমি যেহেতু উত্তরা থাকি তাই হাউজ বিল্ডিং থেকেই বনানী বাসে যেতে হয়। আসা যাওয়ার পথে কত ঘটনাই চোখে পড়ে এরই মাঝে, বলো প্রায় দুপুর, ঘড়ির কাঁটা এক’টা ছুঁইছুঁই, আমি হাউজ বিল্ডিং মাস্কট প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, ওভার ব্রিজ ক্রস করব, ওভার ব্রিজ ক্রস করে গাড়িতে উঠলাম বনানীর উদ্দেশ্যে।
গাড়ির সিটে বসে আছি, হঠাৎ কানে আওয়াজ আসলো মোবাইল রিং হচ্ছে। রিংটোন আমার টোনের মতই স্যামসাং স্মার্ট ফোনের টোন। কল’টা আমার ফোনে আসেনি। আমার পিছনের সিটে বসা এক ভদ্রলোকের মোবাইলে এসেছে। বারবার কল হচ্ছিল কিন্তু তিনি রিসিভ করছিলেন না। একটা সময় তিনি কল রিসিভ করলেন, ফোন ধরেই বলতে শুরু করলেন, ভাই! আমি সায়েদাবাদ আছি। হয়তো দশ মিনিট লাগবে আপনার কাছে আসতে। ইনশাআল্লাহ! দশ মিনিটের মধ্যেই চলে আসব।
আমি কথাটা শুনে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম, ভদ্রলোক আমাকে দেখেই কেমন লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমিও তার দিক থেকে আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। ভাবলাম তিনি এখনো হাউজ বিল্ডিং ক্রস করতে পারেননি, কিন্তু বলে দিয়েছে তিনি সায়েদাবাদ আছে। দশ মিনিটের ভেতরে অপেমাণ ব্যক্তির সাথে দেখাও করবেন ইনশাআল্লাহ!
কিভাবে এটা সম্ভব? তিনি কি পারবে? অপেমাণ ব্যক্তিটির সাথে এই সময়ে সাাৎ করতে? অসম্ভব! এটা কখনো সম্ভব না। পাখিও হয়তো উড়ে যেতে অনেক সময়ের ব্যাপার হবে, দশ মিনিট’তো কিছুই হবে না। তো তিনি মিথ্যে বললেন কেন? ধরে নিলাম বেচারা হয়তো খুব ঝামেলার মাঝে বারবার কল দেওয়াতে বাঁচার জন্য হয়তো এই মিথ্যা কথাটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
কিছুণ পর গাড়ী এয়ারপোর্টে থামলো, আমি বিশেষ এক প্রয়োজনে গাড়ি থেকে নেমে যাবো। আবার ঝামেলা ভেবে নামলাম না, সিটেই বসে রইলাম। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি ছেড়ে কিছুণ এগোতেই বাসরে মুখোমুখি বাস। প্রায় গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়ে যাওয়ার কথা, আল্লাহ মেহেরবানী’তে গাড়ির গ্লাস কিছুটা ভাঙ্গলেও যাত্রীদের কোন তি হয়নি।
এই ভদ্রলোক ততণ গাড়িতে বসেই আছে, কল আসছে। ভদ্রলোক হয়তো অসহ্য হয়ে সাইলেণ্ট লাগিয়ে বসে আছে। রাস্তায় জ্যাম, লোকাল বাস, সময় প্রায় আধঘণ্টা চলে গেল। যদিও কেউ দশ মিনিটের অপোয় এখনো প্রহর গুণছে।
যদি মরে যেতো লাশ খুঁজার জন্য হয়তো কেউ উত্তরা এয়ারপোর্ট আসতো না, সায়েদাবাদেই খুঁজাখুঁজি করতো, জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে মিথ্যার দ্বারাই আবৃত্ত করে নিজেকে যেতো হতো অন্ধকার ভুবনে।
মোবাইলে এমন মিথ্যা বলা নতুন কোন বিষয় নয়। অনেকেই অনেক সময় শুনে থাকি। কিন্তু এটা নিয়ে আমরা কখনো ভাবিনি। হাসির ঠাট্টার উপর চালিয়ে দিই। এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এটা আমাকে চিন্তা করতে হবে। হয়তো আমি মিথ্যা বলে আমার পেরেশানি ণিকের জন্য নিজেকে মুক্ত করতে পারবো, কিন্তু আমার মিথ্যা কথায় হয়তো কেউ কঠিন বিপদের সম্মুখীন হবে। এটা কি কখনো ভেবেছি?
অবশ্যই না, মোবাইলে মিথ্যা বলা একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে, এর দ্বারা কি আমাদের জবানে গোনাহ কামাই হচ্ছে না? আমি কি মিথ্যা বলার মত মহাঅন্যায় মহাপাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি? মিথ্যার দ্বারা আমার ইহকাল ও পরকাল উভয় জাহানের জন্য বিপদ কামাই করে রেখেছি, এটা কি আমাদের ভাবার বিষয় নয়?
ইসলাম বলে মিথ্যা বলা কবির গুনাহ। একটা কবিরা গুনাহের জন্য মুসলমান কমপে সাতহাজার বছর জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। নাউজুবিল্লাহ।
কোন মুসলমান এমন ভয়াবহ কঠোর শাস্তির কথা শুনে কখনো মিথ্যা বলার মত এমন জঘন্য পাপ কাজ করতে পারে না। মোবাইল, সমাজ, বন্ধুমহল যেখানেই থাকি, যে অবস্থায়ই থাকি সত্য বলব, মিথ্যাকে পরিহার করব।
মিথ্যা দ্বারা মানুষ ধ্বংস হয়, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে অশান্তি সৃষ্টি হয়।
অবশ্যই ইহকালে শান্তি ও পরকালের মুক্তির জন্য মিথ্যা বলার মতো এমন জঘন্যতম পাপ কাজ থেকে প্রতিটি মানুষ নিজেকে বিরত রাখবো, ইনশাআল্লাহ।
Leave a Reply