মাতার আনুগত্য ও তার প্রতিদান / আবদুল মালেক মুজাহিদ
এই ঘটনাটি বনী ইসরাঈলের। তাদের মধ্যে একটি লোক অঢেল ধন-সম্পদের অধিকারী ছিল। তার কোন সন্তান ছিল না। একটি গরীব ভ্রাতুষ্পুত্র ছাড়া কোন উত্তরাধিকারী তার ছিল না। ধনী লোকটির মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছিল; কিন্তু তার ঐ ভ্রাতুষ্পুত্রটির লোক এসে গেল। সে তার সম্পদশালী চাচাকে সময়ের পূর্বেই হত্যা করে ফেলল, যাতে সে চাচার সমস্ত সম্পদ লাভ করতে পারে। হত্যা করার পর সে চালাকি করে চাচার মৃত দেহটি অন্য এক গ্রামে নিয়ে গিয়ে কোন ব্যক্তির আঙ্গিনায় ফেলে দিল, যাতে তার উপর কোন সন্দেহ করতে না পারে।
সকাল হওয়া মাত্রই সে নাটকীয় ভঙ্গিমায় চিৎকার করে বলতে লাগল, হত্যার প্রতিশোধ চাই, হত্যার প্রতিশোধ চাই। সে শুধু এটা বলেই ক্ষান্ত হলো না; বরং মূসা আ. এর খেদমতে পৌঁছে কয়েকজন নিষ্পাপ ব্যক্তির উপর হত্যার মামলা দায়ের করে দিল। মূসা আ. এই লোকগুলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তারা নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ প্রকাশ করল। আর তারা দলীল-প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত করল যে, হত্যার ব্যাপারে তারা আদৌ অবগত নয়। তাদের উপর হত্যার অপবাদ দেয়া সম্পূর্ণরূপে অবিচার ও যুলুম। তারা নিঃসন্দেহে নির্দোষ।
মামলার শুনানীর পর মূসা আ. এর পক্ষে ফায়সালা করা কঠিন হয়ে গেল। উপসস্থিত লোকগুলি প্রস্তাব পেশ করল যে আসুন, আমরা আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করি যে, তিনি যেন হত্যাকারীর পর্দা উন্মোচন করে দেন। এ প্রস্তাবটি মূসা আ. এর নিকট পছন্দনীয় হল। তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করার পর আল্লাহ তাআলা নি¤েœর নির্দেশ শুনিয়ে দেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গাভী যবেহ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তখন বনী ইসরাঈল বলতে লাগল, হে মূসা আ.! আপনি আমাদের মামলার শুনানীর পর ওর মীমাংসা করার পরিবর্তে আমাদের সাথে রসিকতা করছেন? এটা কেমন কথা হলো? আমরা তো আপনার নিকট নিহত ব্যক্তির হত্যাকারীর নাম ও ঠিকানা বলে দেয়ার ব্যাপারে আবেদন করেছি, আর আপনি আমাদের একটি গাভী যবেহ করার নির্দেশ দিচ্ছেন? আচ্ছা বলুন তো হত্যাকারীর ও নিহত ব্যাক্তির মামলায় গাভী যবেহ করার প্রশ্ন কোথা থেকে আসলো?
বনী ইসরাইল বড়ই অদ্ভুদ ও বিষ্ময়কর সম্প্রদায় ছিল। আল্লাহ তাআলার হুকুম না মানা এবং এর উপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে নানা প্রকারের প্রতিবাদ করা ছিল তাদের সাধারণ অভ্যাস। তারা এই হুকুমের উপরও তাদের পুরাতন অভ্যাস অনুযায়ী আমল করল। মহান আল্লাহ নিপুনতা সম্পর্কে তারা ছিল বেখবর। তারা এটা অনুধাবন করতে পারেনি যে, তাদেরকে এই হুকুম দ্বারা কোন সাধারণ মানুষ নন; বরং নবী আ. তাদেরকে এই হুকুমে ইলাহী শুনিয়েছেন।
মূসা আ. তাদেরকে বললেন, আমি এরূপ অজ্ঞ ও মূর্খ হওয়া থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
ভাবার্থ এই যে, আমি একজন নবী। এটা আমার মাহাত্মের বিপরীত যে, আমি আমার মুমিন ভাইদের সাথে রসিকতা করব। এটা কি করে হতে পারে যে, তোমরা আমার নিকট আগমন করেছ, আর আমি এই মামলার ফায়সালা করার পরিবর্তে তোমাদেরকে আমার রসিকতার লক্ষস্থল বানিয়ে নেব? বনী ইসরাইলের যখন এই দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল যে, মূসা আ. যে হুকুম দিচ্ছেন তা তাঁর নিজের পক্ষ থেকে নয়; বরং এই হুকুম স্বয়ং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়েছে। তখন তারা মূসা আ. কে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা গাভী যবেহ করব; কিন্তু আমাদেরকে বলে দিন যে, গাভীটি কি ধরণের হবে এবং কোন কোন গুণ ওর মধ্যে থাকবে?
বনী ইসরাইল মূসা আ. কে গাভীর রকম জিজ্ঞেস করে অযথা নিজেদের মামলাকে জটিল করে তুলল। তারা যদি মূসা আ. এর হুকুম অনুযায়ী তৎক্ষণাৎ যে কোন একটি গাভী যবেহ করত তাহলেই উদ্দেশ্য পুরো হয়ে যেত; কিন্তু তারা গাভীটি রকমের ব্যাপারে ক্রমান্বয়ে প্রশ্ন করে নিজেরাই মামলাটিকে জটিলতার মধ্যে ফেলে দিল। সুতরাং তাদের বাজে প্রশ্ন কে আল্লাহ তাআলা নিজেও পছন্দ করলেন না। ফলে তিনিও তাদের মুকদ্দমাকে কঠিন করে দিলেন এবং তাদেরকে জটিলতার মধ্যে নিক্ষেপ করলেন।
এসব যা কিছু হলো তার পিছনেও প্রকৃতপক্ষে একটা কৌশল কাজ করছিল। এ ব্যাপারে বিভিন্ন তাফসিরকারগণ যা লিখছেন তার সারমর্ম নি¤œরূপ।
বনী ইসরাইলের মধ্যে একটি লোক ছিল, তার একটি মাত্র পুত্র সন্তান ছিল। যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তখন সে তার একটি মাত্র বাছুরকে জঙ্গলের দিকে নিয়ে গেল। এই বাছুরটিই ছিল তার পরিশ্রমের উপার্জন এবং সারা জীবনের একমাত্র পূঁজি। জঙ্গলে পৌঁছে সে বাছুরটিকে ছেড়ে দিল এবং বলল, হে আমার মা’বূদ! আপনার উপর ভরসা করে আমি গাভীর বাছুরটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিলাম এবং জঙ্গলেরই দায়িত্বে দিয়ে দিলাম যে পর্যন্ত না আমার শিশু পুত্রটি বড় হয় ( এবং এই গাভীটির মালিক হয়ে যায়)।
গাভীটি জঙ্গলে ঘুরতে ফিরতে শুরু করে। গাভীটি সবেমাত্র যৌবনে পদার্পণ করেছিল। মানুষকে দেখামাত্রই সে পালিয়ে যেত। কিছুদিন পর ঐ লোকটির মৃত্যু হয়ে গেল। উত্তরাধিকারীরূপে সে স্ত্রী এবং একটি নাবালক ছেলে রেখে গেল। পিতার মৃত্যুর পর ছেলেটির লালন-পালনের দায়িত্ব মাতার উপর অর্পিত হল। মাতা স্বীয় শক্তি অনুযায়ী ছেলেটির লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করল। সময়ের সাথে সাথে ছেলেটিও বড় হয়ে উঠল। এমন একদিন এসে গেল যে, ছেলেটি যৌবনে পদার্পণ করল। সে তার মাতার একান্ত অনুগত ও সেবাকারী ছিল।
এই নবযুবকটি রাতকে তিনভাগে ভাগ করে রেখেছিল। রাতের এক তৃতীয়াংশ সে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দিত, এক তৃতীয়াংশ ঘুমিয়ে কাটাত এবং অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ মাতার সেবায় অতিবাহিত করত। তার প্রতিদিনের অভ্যাস ছিল যে, সকাল হওয়া মাত্রই জঙ্গলের দিকে বেরিয়ে পড়ত। জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাটতো এবং ওগুলো নিয়ে বাজারে বিক্রি করত। এতে যা উপার্জন হত এর মধ্য হতে এক তৃতীয়াংশ আল্লাহর পথে দান করে দিত, এক তৃতীয়াংশ পানাহারে খরচ করত এবং বাকী এক তৃতীয়াংশ এনে মাতার হাতে রেখে দিত।
একদিন মাতা ছেলেকে বললেন, তোমার পিতা উত্তরাধিকারী সূত্রে একটি গাভী রেখে গেছেন। গাভীটি অমুক জঙ্গলে রয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে তোমার পিতা ওকে আল্লাহর উপর ভরসা করে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে, যখন তুমি বড় হবে তখন তুমি ওর মালিক হয়ে যাবে। সুতরাং তুমি ঐ জঙ্গলে যাও এবং ইবরাহীম আ. ইসামাইল আ. ইসহাক আ. ইয়াকুব আ. এর রবের নিকট দুআ কর যে, তিনি যেন ঐ গাভীটি তোমাকে ফিরিয়ে দেন। আর হ্যাঁ, ওর নির্দেশ এই যে, যখন তোমার দৃৃষ্টি ওর উপর পড়বে তখন তুমি এরূপ অনুভব করবে যে, যেন ওর চামড়া হতে সোনালী আলোকোচ্ছটা বেরিয়ে আসছে!
যুবকটি মাতার নির্দেশ পালনার্থে জঙ্গলের দিকে চলে গেল যে জঙ্গলের কথা মাতা বলে দিয়েছিলেন। এদিক ওদিক অনুসন্ধানের পর যুবক ঐ গাভীটিকে দেখতে পেল। সে গাভীটিকে ডাক দিয়ে বলে, আমি ইবরাহীম আ. ইসমাইল আ. ইসহাক আ. ইয়াকুব আ. এর রবের নাম দিয়ে তোমাকে আমার নিকট ডাকছি। এ ডাক শুনা মাত্রই গাভীটি যুবকটির দিকে দৌঁড় দিল এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই যুবকটির সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। যুবকটি গাভীর ঘাড়ে রশি ফেলে দিল এবং ওকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়ে গেল। ঐ সময় আল্লাহ তাআলা গাভীপির যবান খুলে দিলেন এবং সে যুবকটিকে সম্বোধন করে বলল, হে মাতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী যুবক! তুমি আমার উপর সওয়ার হয়ে যাও। এর ফলে আমাকে নিয়ে যাওয়া তোমার পক্ষে সহজ হবে।
গাভীটির কথা শুনে যুবকটি বলল, আমার মাতা আমাকে তোমার উপর সওয়ার হতে নিষেধ করেছেন। তিনি শুধু এটুকুই বলেছেন, গাভীটিকে ওর ঘাড় ধরে নিয়ে আসবে।
তার একথা শুনে গাভীটি বলল, বনী ইসরাইলের রবের কসম! তুমি যদি আমার উপর সওয়ার হয়ে যেতে তবে তুমি কখনই আমাকে বশে আনতে পারতে না। চল এখন তুমি যদি পাহাড়কেও তোমার সাথে চলার নির্দেশ দাও তবে সেও তার মূলকে আলগা করে দিয়ে তোমার সাথে চলতে শুরু করে দিবে। এটা তোমার মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের প্রতিদান। যুবকটি গাভীটিকে নিয়ে মাতার খেদমতে হাজির হয়ে গেল। মাতা পুত্রকে বলল, এটা তুমিও জান যে, তোমার নিকট এই গাভীটি ছাড়া আর কোন সম্পদ নেই। তুমি তো দিনের বেলায় কষ্ট করে জঙ্গলে কাঠ কেটে থাক এবং রাতে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাক। যাও, এই গাভীটিকে বাজারে বিক্রি করে এসো। এর ফলে তোমার আর্থিক অবস্থা কিছুটা স্বচ্ছল হবে।
ছেলে জিজ্ঞেস করল, আম্মা! আমি গাভীর মূল্য কত নিব?
মাতা বললেন, এর মূল্য চাইবে তিন স্বর্ণমুদ্রা, তবে আমার অনুমতি ছাড়া বিক্রি করবে না।
যুবক গাভীটি নিয়ে বাজারে চলে গেল। সে গ্রাহকের অপেক্ষা করছিল । ঐ সময়েই একজন ফেরেশতা মানুষ রূপ ধারণ করে প্রকাশিত হলেন। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাকে যুবকটির পরীক্ষা নেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন যে, সে পুরোপুরিভাবে মাতার অনুগত থাকছে, নাকি নিজের স্বার্থের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আল্লাহ তাআলা সব কিছু জানেন তো বটেই; কিন্তু তিনি বান্দাকে খুটিনাটিভাবে পরীক্ষা করে দেখতে চান!
মানবরূপী ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, এ গাভীটি কত মূল্যে বিক্রি করবেন?
নব যুবক, তিন স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে, তবে এরপরেও আমি আমার মাতাকে জিজ্ঞেস করতে চাই।
মানবরূপী ফেরেশতা, আমি ছয়টি স্বর্ণমুদ্রা দিচ্ছি, সুতরাং মাতাকে জিজ্ঞেস করার কোন প্রয়োজন নেই। স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে নিন এবং গাভীটি আমাকে দিয়ে দিন।
নব যুবক, যদি আপনি আমাকে এই গাভীটির সমপরিমাণ স্বর্ণও প্রদান করেন তবুও আমি মাতার পরামর্শ ছাড়া আপনার নিকট এ গাভীটি বিক্রি করব না।
যুবক বাজার হতে বাড়ির পথে রওয়ানা হয়ে গেল। সে তার মাতার নিকট সমস্ত কথা শুনিয়ে দিল যে কথাগুলি মানবরূপ ফেরেশতার সাথে হয়েছিল। গাভীটির মূল্য সম্পর্কেও সে তার মাতাকে বলল। মাতা বললে, যাও গাভীর মূল্য ছয়টি স্বর্ণমুদ্রাই বলবে; কিন্তু বিক্রয়ের পূর্বে আমাকে জিজ্ঞেস করবে।
যুবকটি গাভী নিয়ে বাজারে পৌঁছে গেল। তখন দেখল যে, ঐ মানবরূপী ফেরেশতাটিই পুনরায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বললেন, মাতার সাথে পরামর্শ করে এসেছেন তো?
নব যুবক, হ্যাঁ আমি মাতার সাথে পরামর্শ করেছি এবং তিনি ছয়টি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে গাভীটি বিক্রি করতে বলেছেন; কিন্তু বিক্রি করার পূর্বে তাঁর সাথে আমাকে পরামর্শ করতে বলেছেন।
মানবরূপী ফেরেশতা, আমি আপনাকে বারটি স্বর্ণমুদ্রাই দিতে প্রস্তুত আছি; কিন্তু গাভী আমি এখনই চাই। মূল্য নিয়ে নিন এবং গাভী আমাকে দিয়ে দিন। মাতাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই।
নব যুবক, না, এটা কখনোই হতে পারে না। আমি মাতাকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া কোন মূল্যে গাভীটি বিক্রি করতে পারবো না।
নব যুবকটি বাজার হতে ফিরে আসল এবং বাজারের সমস্ত কথোপকথন মাতাকে শুনিয়ে দিল। এসব কথা শুনে মাতা ছেলেকে বললেন, প্রকৃতপক্ষে তোমার নিকট আগমনকারী ব্যক্তিটি মানবরূপী ফেরেশতা। তিনি তোমাকে পরীক্ষা করতে চান। এবার যদি তিনি তোমার নিকট আগমন করেন তবে তুমি তাঁকে প্রশ্ন করবে, আমরা এই গাভীটি বিক্রি করব, না কি করব না?
নব যুবকটি মাতার নির্দেশ পালন করল। বাজারে যখন ফেরেশতা তাঁর নিকট গ্রাহকরূপে আগমন করলেন তখন যুবকটি তাঁকে মাতার বলে দেয়ার প্রশ্নটি করল?
ফেরেশতা তখন বললেন, আপনি আপনার মাতার নিকট গমন করুন এবং তাঁকে বলুন যে, তিনি যেন গাভীটি বিক্রি না করে এখনও নিজের কাছেই রেখে দেন। কেননা, মূসা বিন ইমরানের আ. নিকট একজন নিহত ব্যক্তির মামলা দায়ের হবে। ঐ লোকগুলি এই গাভীটি অতি উচ্চ মূল্যে ক্রয় করবে।
ফেরেশতার পরামর্শ অনুযায়ী ঐ গাভীটি বিক্রি করা হল না। আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাইলের মাধ্যমে ঐ গাভীটিকে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করিয়ে নিয়ে ঐ অনুগত ছেলেটিকে উত্তম বিনিময় দান করতে চাচ্ছিলেন। সুতরাং হলোও তাই। বনী ইসরাইল আল্লাহর নবী মূসা আ. কে গাভীর রকম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে অযথা নিজেদের উপর বোঝা চাপিয়ে নিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যে রকম ও ঢং এর গাভী যবেহ করার নির্দেশ দেন ঐরূপ গাভী সারা দুনিয়ার মধ্যে শুধু একটি মাত্র লোকের নিকটই ছিল। ঐ লোকটি ছিল এই নবযুবকটিই, যে জীবনে কখনই স্বীয় মাতার অবাধ্য আচরণ করেনি; বরং তাঁর সমুদয় সময় মাতার আনুগত্যেই অতিবাহিত হত।
মূসা আ. যখন গাভীটির রকম সম্পর্কে বনী ইসরাইলকে জানিয়ে দিলেন তখন তারা বহু জায়গায় অনুসন্ধান করার পর এই নব যুবকের নিকটই তাদের চাহিদার গাভীটি পেয়ে যায়। গাভীটির নির্ধারিত মূল্য এই হল যে, গাভীটির ওযনের সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা গাভীর মালিককে দেয়া হবে। সুতরাং তাই হল। যখন গাভীটিকে মূসা আ. এর খেদমতে আনা হল, তখন তিনি আল্লাহ তাআলার ফায়সালা অনুযায়ী গাভীটির গোশত কেটে নিয়ে ঐ গোশতকে মৃত ব্যক্তির দেহের উপর মেরে দেয়ার নির্দেশ দেন।
গোশত নিহত ব্যক্তির দেহের উপর মেরে দেয়া মাত্রই দেহ হতে রক্ত বেরিয়ে পড়ল এবং সে জীবিত হয়ে গেল। ঐ সময় সে বলে দিল, আমাকে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র হত্যা করেছে।
এ বলেই সে ঐ জায়গাতেই পড়ে গিয়ে মারা গেল। সুতরাং হত্যাকারীকে তার উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত করে দেয়া হল। [বিস্তারিত জানতে সূরা বাকারার ৬৭-৬৮ নং আয়াতের তাফসীর দেখুন]
Leave a Reply