ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কিত নির্বাচিত হাদিস
১। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান ব্যক্তির জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তিন দিনের বেশি সময় অপর কোনো মুসলমান ভাইকে ত্যাগ করে। অর্থাৎ তারা কোথাও একে অপরের সম¥ুখীন হলে একজন এদিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং অপরজন ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাদের দুজনের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে প্রথমে সালাম করে কথাবার্তা আরম্ভ করে। [বুখারী ও মুসলিম]
২। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কোনো বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে কুচিন্তা (খারাপ ধারণা) থেকে বেঁচে থাক। কেননা কুচিন্তা (খারাপ ধারণা) হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। তোমরা খারাপ বা দোষের খবর জানার চেষ্টা করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, আর একজনের দরের উপর দিয়ে মাল দর করো না। পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা রেখো না, আর পরোক্ষ নিন্দাবাদে একে অপরের পিছনে লেগো না; বরং তোমরা সকলেই আল্লার বান্দা, ভাই ভাই হয়ে থাকবে। অপর এক রেওয়ায়েতে আছে, পরস্পরে লোভ-লালসা করো না। [বুখারী ও মুসলিম]
৩। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার বেহেশতের দরজা খোলা হয় এবং প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করা হয়। এ শর্তে যে, সে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কোনো কিছুকে অংশীদার করবে না। আর ওই ব্যক্তি এ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়, যে কোনো মুসলমানের সঙ্গে হিংসা ও শত্রুতা পোষণ করে। ফেরেশতাদেরকে বলা হয় যে, এদের অবকাশ দাও, যেন তারা পরস্পর মীমাংসা করে নিতে পারে। [মুসলিম]
৪। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, প্রত্যেক সপ্তাহে দু-বার অর্থাৎ সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার কার্যাবলি আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং প্রত্যেক মু’মিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়; কিন্তু ওই বান্দাকে ক্ষমা করা হয় না, যে নিজে কোনো মুসলমান ভাইয়ের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। তার সম্পর্কে বলে দেওয়া হয় যে, তাদেরকে সময় দাও, যাতে তারা পরস্পর আপস-মীমাংসা করতে পারে। [মুসলিম]
৫। হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে উকবাহ ইবনে আবু মুআইত রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন ওই ব্যক্তি মিথ্যুক নয়, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে লোকদের মাঝে মীমাংসা করে, উভয় পক্ষকে ভালো কথা বলে, একের পক্ষ থেকে অপরকে ভালো কথা পৌঁছায়। [বুখারী ও মুসলিম]
৬। হযরত আসমা বিনতে ইয়াযিদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, মিথ্যা বলা শুধু তিন জায়গায় জায়েজ আছে : ১. নিজের স্ত্রীকে খুশি করার জন্য পুরুষের মিথ্যা কথা বলা। ২. যুদ্ধের সময় মিথ্যা বলা এবং ৩. মানুষের মধ্যে আপস-মীমাংসার উদ্দেশ্যে মিথ্যা বলা। [আহমাদ ও তিরমিযী]
৭। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কোনো মুসলমানের পক্ষে এটা উচিত নয় যে, তিন দিনের বেশি সময় নিজের কোনো মুসলমান ভাইয়ের উপর রাগ হয়ে কথা বলা ত্যাগ করবে। যখন তার সাথে সাক্ষাৎ হবে, তাকে তিনবার সালাম করবে। কোনো বারেই যদি সে জবাব না দেয়, তবে সে তার গুনাহ নিয়েই ফিরবে। [আবু দাউদ]
৮। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলমানের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তিন দিনের বেশি সময় অপর কোনো মুসলমান ভাইয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে সাক্ষাৎ পরিত্যাগ করবে। যে ব্যক্তি তিন দিনের বেশি সময় অপর ভাইকে ত্যাগ করল, আর এ সময় তার মৃত্যু হলো, তবে সে দোজখে প্রবেশ করবে। [আহমাদ ও আবু দাউদ]
Leave a Reply